কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বিউবো’র নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুর রহমান

কাজে কর্মে চিন্তা চেতনায় সৃজনশীলতা ও ভিন্নতা আনতে হবে বিউবো’র নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, আমাদের কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদন/ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা/ আংশিক বিদ্যুৎ বিতরণ এবং সিঙ্গেল বায়ারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বসে থাকলে চলবেনা। আমাদের চিন্তার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে সমানতালে চলতে হবে। প্রয়োজনে কিছুটা অগ্রগামী থাকতে হবে। বিউবোকে বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য নতুন উদ্যমে আমাদেরকে এগুতে হবে। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন, আইসিটি এবং অটোমেশনের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে । কাজে কর্মে, চিন্তা চেতনায় সৃজনশীলতা এবং ভিন্নতা আনতে হবে। মনে রাখবেন “সফল ব্যক্তিরা ভিন্ন কোন কাজ করে না বরং একই কাজ ভিন্নভাবে করে।” তিনি ১ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে বিউবো’র সকল স্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন। এসময় বোর্ড সদস্যবৃন্দও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। চেয়ারম্যান তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিগত ৩৫ বছর যাবৎ আমি বিউবোকে সেবা প্রদানের সুযোগ পেয়েছি। ধাপে ধাপে এই প্রতিষ্ঠানকে চিনে, বুঝে এবং ভালোবেসে আমার পরিণত সময়ে এসে এই প্রতিষ্ঠানের কাণ্ডারী হয়েছি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের চেয়েও একজন বিদ্যুৎকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে আমি গর্ববোধ করি । তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লিডারশিপ হলো ট্রানজেকশনাল যা অনেকটা রেজিমেন্টাল। এ ধরনের নেতৃত্বে রিওয়ার্ড-পানিশমেন্ট সিস্টেম কার্যক্রমগুলো হয় স্বল্পমেয়াদি, আইডিয়া এবং ইনিশিয়েটিভ সাধারণত কম থাকে। এই নেতৃত্বের কিছু গুণগত পরিবর্তনের সাথে ট্রান্সফরমেশনাল লিডারশিপ এর কিছু ডাইমেনশন আমি নিয়ে আসবো। তিনি পিডিবিকে একটি রিসোর্সফুল প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ খাতের সেরা কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তারাই চাকরির বিভিন্ন পর্যায়ে অথবা শেষে বিদ্যুৎ খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হাল ধরে এবং সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে। তাই পিডিবির চাকরি শেষ করে নয় বরং পিডিবিতে থাকতেই কর্মকর্তাদের প্রতিভার সর্বোচ্চ ব্যবহার পিডিবির জন্যই হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমরা মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর জোর দেব। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ট্রান্সফরমেশন প্রসেস এর সাথে সঙ্গতি রেখে মানবসম্পদ উন্নয়ন করা আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টেকনোলজি ও আইসিটি বেজড হওয়া, মাইন্ডসেট পরিবর্তন করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। চেয়ারম্যান বলেন, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এজন্য এখনই প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করাসহ সময়াবদ্ধ কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের প্রযুক্তিতে এখন নানা ধরনের পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এই ট্রান্সফরমেশন অফ টেকনোলজির সাথে আমাদের কর্মপরিকল্পনাতেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন করতে হবে। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন এখন একটি বড় ইস্যু। কপ-২৬ সম্মেলনে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছেন। পরিবেশ সুরক্ষায় গৃহীত নানা কর্মসূচী এবং বিদ্যুৎ খাতে এবিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রমেও এর সুষ্পষ্ট প্রভাব থাকতে হবে। জিরো বা লোয়ার কার্বন এমিশন নিশ্চিত করে এমন প্রযিুক্তি বাছাই করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ খাতে নতুন প্রকল্প নেয়া হবে। চেয়ারম্যান বলেন, নানা বিপরীতমুখী চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। তবে যত সমস্যাই থাকুক না কেন সব সমস্যা মোকাবেলা করে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং পিডিবি’র চলমান প্রকল্পসমূহের কাজের গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে পিডিবিকে সার্বক্ষণিকভাবে ভাইব্রান্ট রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত রাখার সকল কৌশল ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়া হবে মর্মে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সেক্টরের বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে নৈকট্য তৈরি করে একটি চমৎকার সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কেউ যাতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে সমীহ করে এমন ইমেজই তৈরী করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আপনার, আমার জীবন, জীবিকা, মর্যাদা এ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে ঘিরে আবর্তিত। তাই বিউবোর কাজে এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের প্রতিটি কাজই টার্গেট এবং রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড হতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা গুলো অনুমিত সময়ের মধ্যেই অথবা তার পূর্বেই অর্জন করতে হবে। কর্তব্য কাজে সততা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নিয়মনীতি হতে কেউ বিচ্যুত হলে বা বিগদগামী ও দুর্নীতিগ্রস্ত হলে তাকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে আমার জিরো টলারেন্স থাকবে। তিনি বলেন, আমি যাই করবো পিডিবি’র ভালোর জন্যই করবো। পিডিবি’র মঙ্গল হলে বিদ্যুৎ খাতের মঙ্গল হবে। এতে দিনশেষে দেশই উপকৃত হবে। চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সামনে পথ আছে – পথিক হতে হবে। সুন্দর আগামী আপনাদের সামনে। দিন-বদলের কাফেলায় আমি আছি আপনাদের সাথে। আজ হতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে “আমি হবো আমরা” এবং “আমার হবে আমাদের”। পরিশেষে তিনি সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রত্যাশা রেখে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।